You are currently viewing সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের হুশিয়ারি
ছবি : সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের হুশিয়ারি

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের হুশিয়ারি। কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে দ্রুত জাহাজ চলাচল না করা হলে ৪ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ব্যবসায়ী সংগঠন ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

রোববার বিকেলে দ্বীপের জেটি থেকে বাজার পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে এ মানববন্ধন করা হয়।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের হুশিয়ারিতে ডাকা মানববন্ধনের নেতৃত্বে ছিলেন-হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতি, স্পিড বোট মালিক সমিতি, সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতি, অটোরিকশা মালিক সমিতি, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি, দোকান ও বাজার সমিতি এবং স্থানীয় বাসিন্দারা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, টেকনাফ থেকে শিগগিরই পর্যটন জাহাজ চলাচল শুরু করা না হলে আগামী ৪ ডিসেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনের সব আবাসিক হোটেল-রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, দোকানপাটসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে।

তারা আরও জানান, সেন্টমার্টিনের ৯০ শতাংশ মানুষ পর্যটন ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। বছরে মাত্র ৪ মাস পর্যটন ব্যবসা থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে বাকি সময় কাটাতে হয় তাদের। এখন নাফনা নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পর্যটকরা দ্বীপেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে ব্যবসায়ীদের আয় কমেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে দ্বীপে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে বলে দাবি বক্তাদের।

জানা গেছে, টেকনাফ থেকে নাফ নদী হয়ে প্রতি বছর ৮ থেকে ১০টি পর্যটন জাহাজে করে প্রায় ৮ থেকে ১৫ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন যাতায়াত করে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন এবং চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন নৌপথে ১২টি জাহাজ চলাচল করে। এসব জাহাজের বেশির ভাগই টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে চলাচল করে। রুক্ষ সাগর ও কালবৈশাখীর আশঙ্কায় পর্যটকদের নিরাপত্তায় চলতি বছরের ৩১ মার্চ থেকে তিনটি নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। আগামী ৮ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন রুটে আরেকটি জাহাজ চলাচল শুরু হবে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সৈয়দ আলম জানান, টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচল না করলে এ দ্বীপের মানুষের আয় বন্ধ হয়ে যাবে। আয়ের অভাবে না খেয়ে মরতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টির দিকে নজর দেবেন এই কামনা করছি।

সেন্টমার্টিন সেন্ট্রাল জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ আবুল হোসেন বলেন, আমাদের পেটে লাথি মারবেন না, মেরে সাগরে ফেলে দিন। টেকনাফ থেকে জাহাজ লঞ্চ না করা পেটে লাথি মারার সমান।

হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য আবদুর রহমান বলেন, টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচল শুরু না করার জন্য একটি চক্র রয়েছে। নৌচলাচল সংকটের অজুহাত দিয়ে তারা তাদের ব্যবসা একচেটিয়া করার চেষ্টা করছে এবং কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করছে। সেন্টমার্টিনে পর্যটক নিষেধাজ্ঞা ও রাতারাতি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার চেষ্টা করছে ওই সব পরিবেশবাদী সংগঠন। তারা পরিবেশের নামে দ্বীপের পরিবেশের ক্ষতি করছে।

হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম জানান, অহেতুক নৌ-সংকটের কারণে টেকনাফ-সন্ত মতিন নৌপথ বন্ধ রয়েছে। টেকনাফ বন্দরে প্রতিনিয়ত মিয়ানমারের বাণিজ্যিক জাহাজ ও পণ্যবাহী ট্রলার চলাচল করছে। এই বাণিজ্যিক যানবাহনগুলো পর্যটকবাহী জাহাজের চেয়ে অনেক বড় এবং বেশি পণ্য বহন করে। আপনি যদি এত বড় বাণিজ্যিক পণ্যবাহী জাহাজ সরাতে পারেন তবে কেন পর্যটক জাহাজ চলাচল করতে পারবেন না? এই নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে কোনো অসুবিধা হবে না বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। দেশের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় টেকনাফ থেকে পুনরায় জাহাজ চলাচলের অনুমতি চাইছি।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ খান বলেন, “প্রধানমন্ত্রী চাইলে সবই সম্ভব। দ্বীপবাসী তার সহযোগিতা চায়। টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিলে আমাদের দ্বীপের অর্থনৈতিক সংকট দূর হবে।”

টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো: কামরুজ্জামান জানান, টেকনাফ-সেন্টের নাফ নদীর মোহনায় বেশ কয়েকজন ডুবুরি জেগে থাকায় নৌ চলাচলে সংকট দেখা দিয়েছে। মার্টিন নৌপথ এবং মিয়ানমারের নাইক্সিয়াংদিয়া এলাকা। পর্যটকসহ নৌকাগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানির নিচে আটকে থাকার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। আর গত মে মাসে টেকনাফ স্থলবন্দরে মিয়ানমার থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা ট্রলারগুলোর মধ্যে সাতটির বেশি কাঠ বোঝাই ট্রলার ডুবে যায়। এছাড়া সব দিক বিবেচনা করে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত সমুদ্রপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। না

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৯শে সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে আয়োজিত এক সেমিনারে নাফনদী নাব্যতা-সংকট ও সেন্টমার্টিন-টেকনাফ নৌপথে একাধিক শোল জাহাজ চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন পর্যটন সচিব মো: মোকাম্মেল হোসেন।

Leave a Reply