সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশে সফল করতে নদী পথে জড়ো হচ্ছে নেতাকর্মীরা।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর, ধর্মপাশা ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার হাওর এলাকা থেকে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা শতাধিক ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আসতে নদী পথে রওনা হয়েছেন।
পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা থাকায় সমাবেশের দুই দিন আগে নদী পথে জড়ো হচ্ছে নেতাকর্মীরা। শুক্রবার ও শনিবার সুনামগঞ্জসহ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। তাই বিকল্প পন্থা হিসেবে বৃহস্পতিবার সকালে শত শত ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে কর্মী-সমর্থকরা মাইলের পর মাইল নদী পার হয়ে রওনা দেন।
জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক বলেন, বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সমাবেশকে ব্যাহত করতে সরকারের নির্দেশে সমাবেশের দিন ও আগের দিন বিভাগজুড়ে অন্যায় পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়। হাওর এলাকা থেকে নৌকা ও মোটরসাইকেলে সড়কপথে সমাবেশ সফল করতে দুই দিন আগে হাজার হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক রওনা হয়। এছাড়াও জেলা বিএনপির নেতৃত্বে প্রায় আট হাজার মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার জনসভার উদ্দেশে রওনা দেন।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, এদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা সিলেটের গণসমাবেশের পথে পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি। অন্যথায় নদী ও সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে এর দায়ভার সংশ্লিষ্ট পক্ষ নেবে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নুরুল ইসলাম নুরুল বলেন, যত বাধা আসুক, সরকার যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন, সমাবেশকে কোনো কিছুই বানচাল করতে পারবে না। সমাবেশ সফল হবে। প্রয়োজনে নেতা-কর্মীরা পায়ে হেঁটে ও নৌকায় সিলেটে গণসভায় যোগ দেবেন।
জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার বিএনপি জনতার কারণে দিশেহারা হয়ে পরিবহন মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি সাধারণ মানুষের দল। পরিবহন বন্ধ করেও সিলেটে বিএনপির সমাবেশ বানচাল করতে পারবে না সরকার। যেমনটা পারেনি বরিশাল ও ময়মনসিংহে। বিএনপির প্রতি যাদের আস্থা ও বিশ্বাস আছে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে চান তারা যেকোনো উপায়ে সমাবেশে যাবেন।
তাহিরপুর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি, উত্তর বড়দল ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাসেম বলেন, সমাবেশ সফল করাই লক্ষ্য। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। হরতাল ডাকা হওয়ায় বিকল্প পথ হিসেবে নৌকায় করে রওনা দেন নেতাকর্মী-সমর্থকরা। তাহিরপুর ও ধর্মপাশা ভাটি অঞ্চল থেকে নৌকায় সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় দুই দিন। এই দুই দিন ধরে কর্মী-সমর্থকরা নৌকায় রান্না-বান্না করে এবং ঠান্ডা উপেক্ষা করে নৌকায় ঘুমাচ্ছেন।
জিয়াউর রহমান আখঞ্জী ও বাবুল নামে দুই বিএনপি কর্মী জানান, প্রতিটি নৌকায় স্থানীয় বাটি নেওয়া হয়েছে। মাইক, কল নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাউলরা নৌকায় গান গাইছেন এবং নেতাকর্মী-সমর্থকরা দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য স্লোগান দিচ্ছেন। এই মাসে যাওয়া স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
শুক্রবার সকাল থেকে সুনামগঞ্জে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতি ও জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে। তাদের দাবিগুলো হলো সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের লামাকাজি সেতুতে টোল আদায় বাতিল, মহাসড়কে সিএনজিসহ অবৈধ যান চলাচল বন্ধ এবং সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংস্কার।
প্রসঙ্গত, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, নেতাকর্মী হত্যার প্রতিবাদ ও খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে সারাদেশে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জনসভা করবে বিএনপি।