তিন গম্বুজ বিশিষ্ট “মিঠাপুকুর বড় মসজিদ”
মিঠাপুকুর বড় মসজিদ (মিঠাপুকুর তিন সারির মসজিদ) বাংলাদেশের রংপুর বিভাগে অবস্থিত প্রাচীন মসজিদ। এটি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার অন্তর্গত। এটি বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক তালিকাভুক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। মসজিদটি মুঘল আমলের শেষের দিকে তৈরি বলে ধারনা করা হয়।
মিঠাপুকুর বড় মসজিদ ভ্রমন গাইড :
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার গড়ের মাথা নামক স্থান থেকে পশ্চিম দিকে চলে গেছে এশিয়ান হাইওয়ে। দিনাজপুর-ফুলবাড়ি নামক এই সড়ক ধরে হেঁটে গেলে দশ মিনিট আর যানবাহনে গেলে পাঁচ মিনিটের পথ। এরই মধ্যে সড়ক থেকে দক্ষিণ দিকে (বামে) তাকালেই চোখে পড়বে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট “মিঠাপুকুর বড় মসজিদ”। নান্দনিক কারুকার্যের ছোঁয়া সর্বত্র। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মিঠাপুকুরের বড় মসজিদটি বয়সে অনেক পুরনো। রাঙ্গা স্থাপত্য শৈলীর আকর্ষণে দর্শনার্থীরা আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি ২০৯ বছর আগে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে নির্মিত হয়েছিল।
মসজিদটি রংপুর শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। গাছপালা আর সবুজ মাঠ দিয়ে ঘেরা। এর মাঝখানে মিঠাপুকুরের বিশাল মসজিদ। প্রাচীন স্থাপত্য হিসেবে পরিচিত মসজিদটি মুঘল আমলের শেষের দিকে নির্মিত বলে মনে করা হয়। মিঠাপুকুর বড় মসজিদটি স্থানীয়দের কাছে ভাঙা মসজিদ বা পুরনো মসজিদ নামেই বেশি পরিচিত।
জানা গেছে, প্রায় ২৫ একর আয়তনের বিশাল জলাধারটির নাম মিঠাপুকুর। এই জলাশয় বা দীঘির নামানুসারে স্থানটির নামকরণ করা হয়েছে মিঠাপুকুর।
মসজিদটি জলাধার সংলগ্ন। মিঠাপুকুর উপজেলা সদরে অবস্থিত বলে এই মসজিদটিকে মিঠাপুকুর বারমসজিদও বলা হয়। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক তালিকাভুক্ত একটি প্রাচীন স্থাপনা।
নির্মাণশৈলী :
মসজিদটি সুরম্য গেট সহ একটি সম্পূর্ণ সীমানা প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। দেয়ালের ভেতরে খোলা উঠান। মসজিদের চার কোণে স্তম্ভের উপর চারটি মিনার রয়েছে। মিনারগুলো আট কোণায় নির্মিত। মিনারগুলো ছাদ থেকে কিছুটা উপরে উঠে গম্বুজ আকারে শেষ হয়।
মসজিদে প্রবেশের জন্য তিনটি প্রবেশপথ রয়েছে। মসজিদে প্রবেশের দুপাশে স্তম্ভের ওপর দুটি ছোট মিনার রয়েছে। সম্মুখভাগে পোড়া মাটির কাজ মসজিদটিকে আকর্ষণীয় ও নজরকাড়া করে তোলে।
মসজিদের অভ্যন্তরে সদর দরজা বরাবর পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব রয়েছে। মসজিদের প্রবেশপথেও রয়েছে কারুকার্যের ছাপ। মসজিদটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হল কান্দকারে নির্মিত বিশাল তিনটি গম্বুজ।
মসজিদের সামনের দেয়াল, প্যারাপেটের দেয়াল এবং গম্বুজ ড্রামগুলি সুন্দর প্যানেল, পাতা, ফুলের জ্যামিতিক নকশা দ্বারা সজ্জিত। মসজিদের সামনের দেয়ালে লেখা শিলালিপি থেকে জানা যায়, মসজিদটি ১২২৬ হিজরিতে (১৮১০ খ্রিস্টাব্দ) শেখ মোহাম্মদ সাবেরের ছেলে শেখ মোহাম্মদ খাদির নির্মাণ করেন।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত সাইনবোর্ড টাঙানো আছে। অতি প্রাচীন এই মসজিদটির সংস্কার, যথাযথ সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রচারণার অভাবে দিন দিন দর্শনার্থীর সংখ্যা কমছে।