ইসলামিক পদ্ধতিতে ছুটির আবেদন লেখার নিয়ম
ইসলামিক পদ্ধতিতে অফিস অথবা কোন প্রতিষ্ঠান বরাবর কি ভাবে কোন চিঠি লিখবেন তা সম্পর্কে স্পষ্ট একটি ধারণা ।
চিঠি লেখার ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ৯টি বিষয়ে খেয়াল করা খুবই জরুরী।
আপনারা যারা ইন্টারনেটে ছুটির দরখাস্ত লেখার নিয়ম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, আজকের আর্টিকেল হতে আপনাদের জন্য একটি সেরা আর্টিকেল।
প্রথমে পাঠকদের স্বার্থে বাংলায় একটি আবেদনের ফরম্যাট তুলে ধরেছি।
চিঠি লেখার ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ৯টি বিষয়ে খেয়াল করা খুবই জরুরী
১। তারিখ
২। বরাবর/সম্বোধন
৩। ব্যবস্থাপনার পরিচালক/ পরিচালক/সুপার/অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক
৪। প্রতিষ্ঠানের নাম ঠিকানা
৫। মাওদূ/বিষয়
৬। সালাম বা অভিবাদন
৭। মূল বক্তব্য
৮। অতএব
৯। আবেদনকারীর নাম ঠিকানা
আবেদন লেখার নমূনা:
তারিখ : ০৬/০১/২০২২ খ্রি:
বরাবর
ব্যবস্থাপক
ঢালী কন্সট্রাকশন লিঃ
বাড়ি নং # ২২, রোড নং # ১২,
নিকুঞ্জ-২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯।
বিষয়ঃ ছুটির আবেদন।
জনাব,
আস-সালামু আলাইকুম।
সবিনয় বিনীত নিবেদন এই যে, আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী আপনার অধিনস্থ ঢালী কন্সট্রাকশন লিঃ, সিলেট জোনাল, সিলেট এর একজন “সিনিয়র অফিসার”। আমার শারিরীক অসুস্থতার কারনে গত ০১/০১/২০২২ খ্রিঃ হতে ০৫/০১/২০২২ খ্রিঃ তারিখ পর্যন্ত মোট ০৫ (পাঁচ) দিন অফিসে উপস্থিত হতে পারিনি।
অতএব, মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন এই যে, আমার অসুস্থতার বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে বিবেচনা করে অনুপস্থিতি কালের ৫ (পাঁচ) দিন ছুটি মঞ্জুর করতে আপনার সদয় মর্জি হয়।
বিনীত
আপনার একান্ত বাধ্যগত
(আপনার সম্পূর্ণ নাম)
সিনিয়র অফিসার
ইসলামিক চিঠি পত্রের মূল বিষয়ে আলোচনা
যে কোন চিঠিপত্র আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে একজন মুসলিম অবশ্যই অন্য একজনকে সালাম বিনিময় করবেন। কেন না সালাম হচ্ছে :-
আস-সালামু আলাইকুম (আরবি: ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ) আরবি ভাষায় একটি অভিবাদনসূচক বাক্যাংশ, যার অর্থ “আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক”। সাধারণত মুসলিমরা ধর্মীয় অভিবাদনসূচক বাক্য হিসেবে এই বাক্যটি ব্যবহার করে থাকে।
শব্ধ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল করা
আল্লাহর দৃষ্টিতে তারাই উত্তম যারা সালাম বিনিময়ে শুরু করে। (আবু দাউদ ও আত-তিরমিযী কর্তৃক বর্ণিত হাদীস)
একজন মুসলিম সুন্দর অভিবাদন দিয়ে শুরু করবেন এবং বাক্যের সকল ক্ষেত্রে মাধুর্য পূর্ণ শব্দ চয়ন করবেন।
আউযুবিল্লাহ (أعوذ بالله)
“আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি”।
কুর’আন পাঠ করার পূর্বে এই দুয়া পড়তে হয়।
আওলিয়া, আউলিয়া (أولياء)
একবচনে ওলীবন্ধু, সাহায্যকারী, অভিভাবক।
আকল (عقل)বুদ্ধি, মনন, বোধ।আকিদা, আকীদা (عقيدة) বিশ্বাসআখলাক (أخلاق) সৎ গুণাবলি, নৈতিকতার চর্চা। শব্দটির মূল অর্থ ‘চরিত্র’।
আখেরাত, আখিরাত (الآخرة)পরকাল, মৃত্যুর পরবর্তী জীবন।
আজান, আযান (أذان) সালাতের জন্যে আহ্বান।
আদব (أدب) শিষ্টাচার।
প্রচলিত অর্থে ভদ্রতা, বিনয় ইত্যাদি বোঝায়।
আদল (عدل)ন্যায়, বিশষত বণ্টনসংক্রান্ত ন্যায়: সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশগত।
আলেম, আলিম (عالِم)যে জানে, জ্ঞানী।
আল্লাহু আকবর (الله أكبر)”আল্লাহ সর্বশক্তিমান”, ইসলামী দোয়া।
ইকরাম, একরাম (إكرام)সম্মান, আতিথেয়তা, মহত্ব। যুল/জাল যালালি ওয়াল ইকরাম আল্লাহর একটি নাম।
ইখতিলাফ (اختلاف)কোনো ধর্মীয় কোনো নীতিতে মাযহাব বা উলামাদের মতভেদ। এটি ইজমার বিপরীত।
ইজমা (إجماع)কোনো বিষয়ে মুসলিম আলেমদের (বা উম্মতের) ঐকমত্য – শরীয়তের চারটি উৎসের একটি। এর বিপরীত হলো ইখতিলাফ (মতবিভেদ)।
ইজাজত (إجازة)ইসলামী জ্ঞান বা কথা প্রচারের অনুমতি।
ইতিকাফ, এতেকাফ (إعتكاف)মসজিদে থেকে ইবাদত করা। সাধারণত রমজান মাসের শেষ দশ দিন প্রত্যকে মসজিদে ইতিকাফে বসতে হয়।
ইফতার (إفطار)রমজান মাসে সূর্যাস্থের পর রোজা ভেঙে পানাহার করা।
ইবাদাহ, ইবাদত (عبادة)উপাসনা, স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পণ।
ইমাম (إمام)আক্ষরিক অর্থে নেতা, যিনি সমাজের নেতৃত্ব দেন বা নামাজ পরিচালনা করেন। শিয়ারা নবীর উত্তরাধিকারীদেরকে ইমাম বলে।
ইলম, এলেম (علم)সব ধরনের জ্ঞান ও বিজ্ঞান।
ইলাহ (إله)উপাস্য। বিধর্মীদের দেবতাকেও ইলাহ বলা হয়।
ইস্তিগফার (استغفار)ক্ষমাপ্রার্থনা।ইসতিসলাহ (استصلاح)জনস্বার্থ, শরীয়তের একটি উৎস।
ইসনাদ (إسناد)হাদিসের ধারাবাহিক বর্ণনাকারীগণ।
ইসরা (الإسراء)যে রাত্রিভ্রমণে মুহাম্মদ মিরাজে গমন করেন।
ইসলাম (الإسلام)”আল্লাহর প্রতি আত্মনিবেদন”, যে শব্দ থেকে এর উৎপত্তি তার অর্থ আনুগত্য, আত্মনিবেদন, শান্তি ও পবিত্রতা।
ঈদ (عيد)উৎসব।
ঈমান, ইমান (إيمان)ইসলামের মূল বিষয়গুলোতে বিশ্বাস।
উম্মাহ, উম্মত (الاُمّة)বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়। আক্ষরিক অর্থে ‘জাতি’।
উমরা, ওমরাহ (عمرة)হজ্জের মতোই তবে একটু সংক্ষিপ্ত তীর্থযাত্রা যা সারাবছর করা যায়।
উলামা, ওলামা (علماء)মুসলিম সমাজের প্রধানগণ: শিক্ষক, পণ্ডিত, ইমাম বা কাজী। আক্ষরিক অর্থ ‘জ্ঞানী’।
উসুল আল ফিকহ (أصول الفقه)ইসলামী আইনশাস্ত্রের গবেষণা ও চর্চা।
এশা, ইশা (عشاء)রাত, নামাজের পঞ্চম ওয়াক্ত।
ওফাত (وفاة)মৃত্যু।
ওয়াজিব (واجب)অবশ্য পালনীয় কিন্তু ফরজের সমান নয়।
ওয়ালাইকুমুস সালাম (وعليكم السلام) “আপনার ওপরও শান্তি বর্ষিত হোক”, সালামের জবাব।
কাফির, কাফের (كافر)”ইচ্ছাকৃতভাবে সত্য গোপনকারী”, যারা ইসলামের মূল বিষয়গুলো অস্বীকার করে। অবিশ্বাসী বা অমুসলিমদেরকে কাফির বলা হয়।
কিতাব (كتاب)বই।
কুরআনকে অনেকসময় আল-কিতাব বলা হয়।
কিবর (كِبْر)অহংকার, গর্ব।
কুন (كن)”হও”, আল্লাহর এই আদেশে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়।
কুফর (كفر)অবিশ্বাস, অস্বীকার, খোদাদ্রোহীতা।
মূলত এসকল শব্দগুলো ইসলামী ও আরব সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য শব্দ। এমন আরও অসংখ্য শব্দ রয়েছে। যা ব্যবহার করে একটি সুন্দর ও মাধুর্য পূর্ণ চিঠি বা আবেদনপত্র লেখা সম্ভব। এতে করে ইসলামী ভাবধারাকে অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব।