বিএনপির সর্বশেষ জনসভাস্থলকে কেন্দ্র করে সরকার ও বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের স্থান নিয়ে বিএনপি ও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে এখনো কোনো ঐকমত্য হয়নি। তবে নয়াপল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে সমাবেশ করার প্রস্তাব নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে চলমান আলোচনায় বিএনপি আশাবাদী। রাজধানীর আরামবাগ এলাকায় ফলপ্রসূ হবে।
মঙ্গলবার রাতে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার হায়াতুল ইসলাম খানের সঙ্গে আলোচনায় বসেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী। শহীদ উদ্দিন চৌধুরী রাত সোয়া ৯টার দিকে জানান, আরামবাগে আইডিয়াল স্কুলের সামনে সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।
“আরামবাগে আইডিয়াল স্কুলের সামনে সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।”-শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক, বিএনপি
কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “তিনি (হায়াতুল ইসলাম খান) আজও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কথা বলেছেন। আমি স্পষ্ট বলেছি, আমরা সেখানে যাব না। বরং নয়াপল্টনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার দায়িত্ব নেব। তারপরও না হলে বিকল্প হিসেবে আরামবাগে আইডিয়াল স্কুলের সামনে সমাবেশ করার কথা বলেছি।তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।
নয়াপল্টনে জনসভা হবে নাকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক মেটাতে পুলিশের পক্ষে জেলা প্রশাসক হায়াতুল ইসলাম খান ও বিএনপির পক্ষে শহীদ উদ্দিন চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তবে পুলিশের উপ-কমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান জানান, বিএনপি নেতার সঙ্গে আলোচনার ফলাফল গতকাল রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে জানানো হয়েছে।
হায়াতুল ইসলাম খান প্রথম আলো</em>কে বলেন, “আলোচনায় তারা (বিএনপি) আবার মতিঝিলের আরামবাগে সমাবেশ করার কথা বলেছে। পুলিশ তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে। শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, তিনি রিপোর্ট করবেন। বিষয়টি দলীয় কর্তৃপক্ষের কাছে।
হায়াতুল ইসলাম আরও বলেন, বুধবার কোন খোলা মাঠ বা খোলা জায়গায় সমাবেশের অবস্থান সম্পর্কে বিএনপির নেতাকে জানাতে বলা হয়েছে।
পুলিশ-বিএনপি উভয়ই অনড়
গতকাল সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন অনড় থাকলে নয়াপল্টনে সমাবেশের বিষয়ে বিএনপিও অনড় থাকবে। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপির প্রস্তাবিত অন্য জায়গাগুলোতে পুলিশ প্রশাসন কর্ণপাত করছে না।
এদিকে সমাবেশস্থল নিয়ে বিতর্ক থাকলেও গতকাল সকাল থেকেই নয়াপল্টনে জড়ো হন অনেক নেতাকর্মী। তারা দিনভর দলীয় কার্যালয়ের সামনে স্লোগান দেন।
জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, দলীয় নেতাকর্মীদের গুলিতে নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে নয়টি বিভাগীয় (সাংগঠনিকসহ) গণসমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। . আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় শেষ গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশস্থল নিয়ে সরকার ও বিএনপি মুখোমুখি।
নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু পুলিশ ২৬ শর্তে তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেয়। কয়েকদিন ধরেই চলছে বিতর্ক। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে যাবে না বলে জানিয়েছে বিএনপি। কারণ এই মুহূর্তে সেখানে সমাবেশ করা নিরাপদ মনে করছে না বিএনপি।
এদিকে ঢাকার জনসভাকে ঘিরে পুলিশ গ্রেফতার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি ও নেতাকর্মীদের নির্যাতন করে সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। বিএনপি বলছে, ৩০ নভেম্বর রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকায় সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ বাহিনী ব্যবহার করে সরকার কর্তৃক অবৈধ মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার ও পুলিশি নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় স্থায়ী কমিটি।
গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত গোলটেবিল অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর অবশ্যই ঢাকায় জনসভা হবে। এই সমাবেশ নিয়ে কোনো সন্দেহ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণ নতুন স্বপ্ন দেখবে। সমাবেশ এখান থেকে মানুষ নতুন কর্মসূচি নিয়ে আরও নিবিড়ভাবে মাঠে নামবে। তারা সেই কাজ করবে যাতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।