You are currently viewing আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ও তার পরিবার সম্পর্কে জানুন
Dr. Abdullah Jahangir

আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ও তার পরিবার সম্পর্কে জানুন

খোন্দকার আবু নাসর মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

পুরো নাম খোন্দকার আবু নাসর মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর । (১৯৫৮-২০১৬) ছিলেন একজন বাংলাদেশী ইসলামি ব্যক্তিত্ব । একাধারে অধ্যাপক, গবেষক, লেখক, টিভি আলোচক ও অনুবাদক এবং আইটিভি ইউএস (মার্কি‌ন ইসলামি টেলিভিশন চ্যানেল)-এর উপদেষ্টা ছিলেন । 

তিনি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল হাদিস ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন ।

মৃত্যু : ২০১৬ সালের ১১ মে, ৫৫ বছর বয়সে এক সড়ক দুর্ঘটনায় আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর মৃত্যুবরণ করেন ।

তিনি ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ঝিনাইদহ হতে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে মাগুরা জেলার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পারনান্দুয়ালী এলাকায় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাছে একটি খুলনাগামী মালবাহী ভ্যানের সাথে তার গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়, আর সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন । তার জানাজার নামাজে লক্ষাধিক মানুষ অংশ নিয়েছিলো ।

জন্ম : 

৫ নভেম্বর ১৯৫৮, ধোপাঘাট-গোবিন্দপুর গ্রাম, ঝিনাইদহ সদর, ঝিনাইদহ ।

মৃত্যু : 

১১ মে ২০১৬ (বয়স ৫৭), ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক, মাগুরা জেলা ।

মৃত্যুর কারণ : সড়ক দুর্ঘটনা ।

ধর্ম : ইসলাম ।

জাতীয়তা: বাংলাদেশী ।

দাম্পত্য সঙ্গী: ফাতিমা আবুল আনসার ।

সন্তান : খোন্দকার উসামা জাহাঙ্গীর (পুত্র),জাকিয়া খোন্দকার, রিফাত খোন্দকার ও বুসাইনা খোন্দকার (৩ কন্যা) ।

উল্লেখযোগ্য কাজ :-পবিত্র বাইবেল: পরিচিতি ও পর্যালোচনা, জিজ্ঞাসা ও জবাব (৫ খন্ড), আল-ফিকহুল আকবর, হাদিসের নামে জালিয়াতি, এহইয়াউস সুনান,খুতবাতুল ইসলাম, ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ, কিতাবুল মোকাদ্দস, ইঞ্জিল শরীফ ও ঈসায়ী ধর্ম, বুহুসুন ফি উলূমিল হাদীস ।

শিক্ষাজীবন : 

সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা এবং ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সৌদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ।

যে জন্য পরিচিত : 

ইসলামী ব্যক্তিত্ব, লেখক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ ।

কর্মজীবন : অধ্যাপনা, আল হাদিস বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ।

প্রতিষ্ঠান : আস সুন্নাহ ট্রাস্ট ।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন :

আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ১৯৫৮ সালের ৫ নভেম্বর ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়নের ধোপাঘাট-গোবিন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতা খোন্দকার আনওয়ারুজ্জামান এবং মাতা বেগম লুৎফুন্নাহার।

শিক্ষাজীবন

আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ১৯৭৩ সালে ঝিনাইদহ সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল, ১৯৭৫ সালে আলিম এবং ১৯৭৭ সালে ফাজিল পাশ করেন । এরপর ১৯৭৯ সালে সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া থেকে হাদিস বিভাগে কেন্দ্রীয় কামিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সারা দেশের মধ্যে ৮ম স্থান অর্জন করেন।

মাদ্রাসায় অধ্যয়নের পাশাপাশি ১৯৮০ সালে মাগুরার সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে যশোর বোর্ডে প্রথম স্থান অর্জন করেন এবং পুরস্কারস্বরূপ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে নৌভ্রমণের সুযোগ পান।

তিনি সৌদি আরবের রিয়াদ শহরের ইমাম মুহাম্মদ বিন সউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬ সালে আরবি বিভাগে অনার্স এবং ১৯৯২ সালে উসুলে হাদিস বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ১৯৯৮ সালে কাওয়ায়েদুল লুগাতিল কোরআন বিষয়ের উপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। সেখানে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি বর্তমান সৌদি বাদশা ও তৎকালীন রিয়াদের গভর্নর সালমান বিন আব্দুল আজিজের হাত থেকে পর পর দু’বার সেরা ছাত্রের পুরস্কার গ্রহণ করেন এবং চূড়ান্ত পরীক্ষায় ৯৬% নাম্বার পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন । 

সৌদি আরবে বাংলাদেশীদের মধ্যে আরবি ব্যাকরণ বিষয়ে তিনিই প্রথম ডক্টরেট উপাধি লাভ করেন । তিনি সৌদি আরবের কুল্লিয়াতুল লুগাতিল আরাবিয়া -তে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত উত্তর রিয়াদ ইসলামিক সেন্টারে দাঈ, অনুবাদক ও দোভাষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে অনুবাদক হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি মুহাম্মদ বিন সউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের পাশাপাশি কুরআন হিফজ সম্পন্ন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে তিনি সৌদি আরবের আব্দুল আজিজ ইবনে বায, মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উথাইমিন, সালেহ আল-ফাওজান, আবদুল্লাহ ইবনে জিবরিন প্রমুখসহ আরও অনেক শিক্ষকের সাহচর্যে থেকে জ্ঞানার্জন করেছেন। পাশাপাশি নিজদেশে মাওলানা উবায়দুল হক, মাওলানা আবদুর রহিম, মাওলানা মিয়া মোহাম্মাদ কাসেমী, মোহাম্মাদ ফখরুদ্দীন, আনোয়ারুল হক কাসেমী প্রমুখসহ আরও অনেকের কাছে শিক্ষালাভ করেছেন।

কর্মজীবন

ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ১৯৭৯ সালে কামিল পাশ করার পর ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নাচনা নূরনগর সিদ্দিকীয়া আলিম মাদ্রাসায় প্রায় দুই বছর শিক্ষকতা করেন । ১৯৯৮ সালে তিনি সৌদি আরব থেকে দেশে এসে প্রথমে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক মাস শিক্ষকতা করেন । এরপর ১৯৯৮ সালে তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আল হাদিস ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি ইন্দোনেশিয়া থেকে ইসলামি উন্নয়ন ও আরবি ভাষা বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। 

এসময় ইন্দোনেশিয়ার মালাংয়ে, মিনিস্ট্রি অব রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্স আয়োজিত সেমিনার ও কর্মশালায় (১১-১৬ অক্টোবর, ১৯৯৯) তিনি তার গবেষণাপত্র পাঠ ও জমাদান করেন। একই বছর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে ও ২০০৪ সালে ‘সহযোগী অধ্যাপক’ পদে পদোন্নতি লাভ করেন । এছাড়া তিনি ২০০৪ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ও ২০০৫ সালে আল ফিকহ বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে তিনি আল হাদিস ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক পদে উন্নীত হন । কর্মজীবনে ঢাকার দারুস সালাম কওমি মাদ্রাসা ও পাবনার জেলার পাকশিতে অবস্থিত জামিয়াতুল কুরআনিল কারিম কওমি মাদ্রাসায় খণ্ডকালীন ‘শায়খুল হাদিস’ হিসেবে বুখারি শরিফ পাঠদান করতেন ।

এছাড়াও তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন এবং আমৃত্যু ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেছেন । ২০০৩ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত তিনি এ মসজিদে জুম’আর খুতবা দিয়েছেন। তার আলোচনা শোনার জন্য দূরের জেলা থেকেও মানুষ আসত ।

ব্যক্তিগত জীবন

তিনি ফুরফুরা শরীফের পীর আব্দুল কাহহার সিদ্দিকীর কন্যা ফাতিমা আবুল আনসারকে বিবাহ করেন। তাদের খোন্দকার উসামা জাহাঙ্গীর নামে এক পুত্র; এবং জাকিয়া খোন্দকার, রিফাত খোন্দকার, বুসাইনা খোন্দকার নামে তিন কন্যা রয়েছে। খোন্দকার উসামা জাহাঙ্গীর মুহাম্মদ বিন সউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় হতে অধ্যায়ন সমাপ্ত করেছেন ।

ইসলামি আলোচনা

তিনি শিরক, বিদয়াত, আকিদা সহ ইসলামের সমসাময়িক বিষয়ে পিস টিভি, ইসলামিক টিভি, এটিএন বাংলা, এনটিভি, বাংলা ভিশন, দিগন্ত টিভিসহ বিভিন্ন টিভিতে ইসলামি আলোচনায় অংশ নিতেন। তিনি আরবি, ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু ভাষায় পারদর্শী ছিলেন, এসব ভাষায় দেশের শীর্ষস্থানীয় অনুষ্ঠানে আলোচনা করতেন। 

ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের আলেমদের মতপার্থক্য নিরসনে তিনি কাজ করতেন। তিনি ইসলামের বিভিন্ন উপদলের মধ্যে সমন্বয় করে কথা বলার জন্য সুপরিচিত হয়েছিলেন, তিনি সালাফি, আহলুল হাদিস, মাজহাবপন্থি, আহল-ই-হাদীস সহ সকল দলের মধ্যে সমাদৃত ছিলেন। এছাড়াও তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামি আলোচনার জন্য যেতেন এবং সশরীরে আলোচনা করতেন। 

তিনি অনলাইনে জনপ্রিয় ছিলেন, ইসলামের সমসাময়িক বিভিন্ন সমস্যা, দিক-নির্দেশনা নিয়ে তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল, তার ফেসবুকে পাতায় আলোচনা করতেন। এছাড়াও তার আস সুন্নাহ ট্রাস্ট ওয়েবসাইটে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লেখালেখি করতেন

 

This Post Has 2 Comments

Leave a Reply